বাংলাদেশে ডিভোর্স এখনো একটি সামাজিক ট্যাবু, যদিও আইনে এর স্বীকৃতি ও প্রক্রিয়া বহু আগে থেকেই বিদ্যমান। মুসলিম পার্সোনাল ল অনুযায়ী স্বামী “তালাক” দিয়ে বৈধভাবে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে পারে, তবে এটি Muslim Family Laws Ordinance, 1961-এর ৭(১) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন কাউন্সিলে নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে কার্যকর হয়।
একইভাবে স্ত্রীও Dissolution of Muslim Marriage Act, 1939-এর ২ ধারার অধীনে কোর্টে ডিভোর্স চাইতে পারে যদি স্বামী দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকে, ভরণপোষণ না দেয়, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে বা অন্য কোনো বৈধ কারণ থাকে। এছাড়া স্ত্রী চাইলে খুলা প্রক্রিয়ায় স্বামীর সম্মতিতে বা আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু এসব আইন বাস্তবে কতটা কার্যকর তা নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়ে গেছে।
ডিভোর্সের পর নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশি আইনে স্বামী ডিভোর্সের পর শুধুমাত্র ইদ্দতকাল (প্রায় তিন মাস) পর্যন্ত ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এর বাইরে দীর্ঘমেয়াদি ভরণপোষণ বা সম্পত্তি ভাগাভাগির কোনো স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে ১৫-২০ বছর সংসার করা নারীও ডিভোর্সের পর হঠাৎ আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। ২০১১ সালের Bangladesh High Court-এর (Writ Petition No. 738/2011) এক রায়ে আদালত বলেছে, তালাকের নোটিশ সঠিকভাবে প্রদান না করলে ডিভোর্স বৈধ হবে না। যদিও এটি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে, তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, নারীর দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক অধিকার কি আইন দ্বারা যথাযথভাবে সুরক্ষিত?
যুক্তরাজ্যে আইনগত কাঠামো একেবারেই আলাদা। ২০২২ সালে প্রণীত Divorce, Dissolution and Separation Act 2020 অনুযায়ী এখন আর দোষ প্রমাণের প্রয়োজন নেই; এটি একটি no-fault divorce ব্যবস্থা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আদালত উভয়ের আর্থিক অবস্থা, সন্তানদের স্বার্থ এবং গৃহিণীর অবদান বিবেচনা করে Financial Remedy Order জারি করে। White v White [2000] UKHL 54 মামলাটি ছিল এক যুগান্তকারী রায় যেখানে লর্ড নিকলস বলেছিলেন, “There should be no bias in favour of the money-earner and against the home-maker.” অর্থাৎ গৃহিণীর অবদানও সমান মর্যাদাপূর্ণ।
পরবর্তীতে Miller v Miller; McFarlane v McFarlane [2006] UKHL 24 মামলায় আদালত বলেন, স্বল্প মেয়াদের বিবাহ হলেও সম্পত্তির ন্যায্য ভাগ স্ত্রীকে দিতে হবে।
এই তুলনা স্পষ্ট করে যে, বাংলাদেশে নারীরা ডিভোর্সের পর অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, যেখানে যুক্তরাজ্যে আইন তাদের দীর্ঘমেয়াদী সাপোর্ট নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের নারীরা এখন শিক্ষিত, আয়-উপার্জনে সমান অবদান রাখছে, তবুও ডিভোর্সের পর তাদের কাছে কোনো সম্পত্তি বা আর্থিক সহায়তা না থাকা একটি বড় বৈষম্য তৈরি করে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সময় এসেছে আইন পরিবর্তনের। বাংলাদেশে Equal Property Rights ও দীর্ঘমেয়াদী ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে যেন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে অসহায় না হয়ে পড়ে। এ ছাড়া দ্রুত বিচার ও সহজ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে নারীরা সাহস পায় আইনের আশ্রয় নিতে।
ডিভোর্স কোনো নারীর জীবন শেষ নয়, বরং একটি নতুন শুরুর সুযোগ। সেই শুরু যদি আইনের সুবিচারে হয়, তবে নারীরা সমাজে আরও শক্ত অবস্থান নিতে পারবে। আর এটাই হবে প্রকৃত অর্থে আইনপ্রয়োগের সাফল্য।
লেখক: সায়মা আনিকা (বাংলাদেশ বনাম যুক্তরাজ্য তুলনামূলক বিশ্লেষণ)
একইভাবে স্ত্রীও Dissolution of Muslim Marriage Act, 1939-এর ২ ধারার অধীনে কোর্টে ডিভোর্স চাইতে পারে যদি স্বামী দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকে, ভরণপোষণ না দেয়, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে বা অন্য কোনো বৈধ কারণ থাকে। এছাড়া স্ত্রী চাইলে খুলা প্রক্রিয়ায় স্বামীর সম্মতিতে বা আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু এসব আইন বাস্তবে কতটা কার্যকর তা নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়ে গেছে।
ডিভোর্সের পর নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশি আইনে স্বামী ডিভোর্সের পর শুধুমাত্র ইদ্দতকাল (প্রায় তিন মাস) পর্যন্ত ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এর বাইরে দীর্ঘমেয়াদি ভরণপোষণ বা সম্পত্তি ভাগাভাগির কোনো স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে ১৫-২০ বছর সংসার করা নারীও ডিভোর্সের পর হঠাৎ আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। ২০১১ সালের Bangladesh High Court-এর (Writ Petition No. 738/2011) এক রায়ে আদালত বলেছে, তালাকের নোটিশ সঠিকভাবে প্রদান না করলে ডিভোর্স বৈধ হবে না। যদিও এটি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে, তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, নারীর দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক অধিকার কি আইন দ্বারা যথাযথভাবে সুরক্ষিত?
যুক্তরাজ্যে আইনগত কাঠামো একেবারেই আলাদা। ২০২২ সালে প্রণীত Divorce, Dissolution and Separation Act 2020 অনুযায়ী এখন আর দোষ প্রমাণের প্রয়োজন নেই; এটি একটি no-fault divorce ব্যবস্থা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আদালত উভয়ের আর্থিক অবস্থা, সন্তানদের স্বার্থ এবং গৃহিণীর অবদান বিবেচনা করে Financial Remedy Order জারি করে। White v White [2000] UKHL 54 মামলাটি ছিল এক যুগান্তকারী রায় যেখানে লর্ড নিকলস বলেছিলেন, “There should be no bias in favour of the money-earner and against the home-maker.” অর্থাৎ গৃহিণীর অবদানও সমান মর্যাদাপূর্ণ।
পরবর্তীতে Miller v Miller; McFarlane v McFarlane [2006] UKHL 24 মামলায় আদালত বলেন, স্বল্প মেয়াদের বিবাহ হলেও সম্পত্তির ন্যায্য ভাগ স্ত্রীকে দিতে হবে।
এই তুলনা স্পষ্ট করে যে, বাংলাদেশে নারীরা ডিভোর্সের পর অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, যেখানে যুক্তরাজ্যে আইন তাদের দীর্ঘমেয়াদী সাপোর্ট নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের নারীরা এখন শিক্ষিত, আয়-উপার্জনে সমান অবদান রাখছে, তবুও ডিভোর্সের পর তাদের কাছে কোনো সম্পত্তি বা আর্থিক সহায়তা না থাকা একটি বড় বৈষম্য তৈরি করে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সময় এসেছে আইন পরিবর্তনের। বাংলাদেশে Equal Property Rights ও দীর্ঘমেয়াদী ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে যেন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে অসহায় না হয়ে পড়ে। এ ছাড়া দ্রুত বিচার ও সহজ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে নারীরা সাহস পায় আইনের আশ্রয় নিতে।
ডিভোর্স কোনো নারীর জীবন শেষ নয়, বরং একটি নতুন শুরুর সুযোগ। সেই শুরু যদি আইনের সুবিচারে হয়, তবে নারীরা সমাজে আরও শক্ত অবস্থান নিতে পারবে। আর এটাই হবে প্রকৃত অর্থে আইনপ্রয়োগের সাফল্য।
লেখক: সায়মা আনিকা (বাংলাদেশ বনাম যুক্তরাজ্য তুলনামূলক বিশ্লেষণ)